এসডি ক্লোজার

সংক্ষিপ্ত বিবরণ

কৃত্রিম হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট হল একটি যুগান্তকারী চিকিৎসা পদ্ধতি, যা একটি যান্ত্রিক হার্টের মাধ্যমে অকেজো হৃদয়ের কার্যক্রম প্রতিস্থাপন করতে ডিজাইন করা হয়েছে। শেষ পর্যায়ের হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতায় ভোগা রোগীদের জন্য, যেখানে প্রচলিত চিকিৎসা আর কার্যকর নয়, একটি কৃত্রিম বা সিন্থেটিক হার্ট জীবনদানের শেষ আশ্রয়।

একটি প্রকৃত হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের পরিবর্তে, যা দাতার উপর নির্ভরশীল, একটি কৃত্রিম হার্ট বা টোটাল আর্টিফিশিয়াল হার্ট (TAH) একটি প্রস্থেটিক হার্ট যা প্রাকৃতিক হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম অনুকরণ করে। এটি জীবন-মরণ সমস্যায় থাকা রোগীদের জন্য নতুন জীবনের সম্ভাবনা তৈরি করে।

কেন কৃত্রিম হার্ট ট্রান্সপ্লান্টের প্রয়োজন হয়?

যখন প্রাকৃতিক হৃদপিণ্ড তীব্র হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতার কারণে রক্ত সঞ্চালন কার্যকরভাবে করতে পারে না, তখন কৃত্রিম হার্ট একটি অত্যাবশ্যক সমাধান হয়ে ওঠে। কৃত্রিম বা যান্ত্রিক হার্ট ট্রান্সপ্লান্টের জন্য প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

• শেষ পর্যায়ের হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতা: যখন হৃদপিণ্ড এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়।
• দাতা হৃদযন্ত্রের অভাব: দাতার অভাবে প্রকৃত হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন তাৎক্ষণিকভাবে সম্ভব না হলে।
• স্থায়ী সমাধানের জন্য অপেক্ষা: প্রকৃত হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষা করার সময় এটি একটি অস্থায়ী সমাধান হিসাবে কাজ করে।
• দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা: যারা প্রচলিত হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের জন্য উপযুক্ত নন, তাদের জন্য এটি একটি স্থায়ী সমাধান হতে পারে।

প্রযুক্তির উন্নতির মাধ্যমে আমরা স্থায়ী কৃত্রিম হৃদযন্ত্রের আরও কাছাকাছি পৌঁছে গেছি, যা সারা বিশ্বের অসংখ্য রোগীর জন্য আশার আলো হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কৃত্রিম হার্ট ট্রান্সপ্লান্টের মূল সুবিধাসমূহ

• জীবন রক্ষাকারী সমাধান: সংকটাপন্ন অবস্থায় থাকা রোগীদের জন্য তাৎক্ষণিক উপশম প্রদান করে।
• দাতার উপর নির্ভরতা নেই: প্রকৃত হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের মতো দাতার জন্য অপেক্ষার প্রয়োজন নেই।
• জীবনের মান উন্নত করা: রোগীরা চলাচল ও শক্তি পুনরুদ্ধার করতে পারেন।
• উচ্চ সাফল্যের হার: কৃত্রিম হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের সাফল্যের হার ক্রমাগত বাড়ছে, এবং ভারত এই উদ্ভাবনী চিকিৎসায় অগ্রণী।

কৃত্রিম হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট চিকিৎসার আগে কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবেন?

1. মেডিক্যাল মূল্যায়ন: আপনার চিকিৎসক মূল্যায়ন করবেন যে আপনি টোটাল কৃত্রিম হৃদপিণ্ডের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী কিনা।
2. জীবনধারার পরিবর্তন: হৃদয়-সক্ষম জীবনধারা গ্রহণ করুন, যার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং ব্যায়াম, যা হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন সার্জারির আগে গুরুত্বপূর্ণ।
3. মানসিক সহায়তা: যান্ত্রিক হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন বা হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
4. আর্থিক পরিকল্পনা: হার্ট ট্রান্সপ্লান্টের খরচ বিবেচনা করুন। ভারতে, বিশেষত দিল্লি এবং অন্যান্য শহরে হার্ট ট্রান্সপ্লান্টের খরচ পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।

কৃত্রিম হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট কীভাবে সম্পন্ন হয়?

কৃত্রিম হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হৃদযন্ত্রকে কৃত্রিম বা যান্ত্রিক হৃদযন্ত্র দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। এর একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে দেওয়া হল:

১. অ্যানেস্থেশিয়া: রোগীকে সাধারণ অ্যানেস্থেশিয়ার মাধ্যমে অচেতন করা হয়।

২. ক্ষতিগ্রস্ত হৃদযন্ত্র অপসারণ: অকেজো হৃদযন্ত্র সরিয়ে ফেলা হয়।

৩. কৃত্রিম হৃদযন্ত্র সংযোজন: প্লাস্টিক হার্ট বা কৃত্রিম হার্ট পাম্প রোগীর রক্তনালীর সাথে সাবধানে সংযুক্ত করা হয়।

৪. মনিটরিং এবং পুনরুদ্ধার: সার্জারির পর রোগীকে আইসিইউতে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়, যাতে কৃত্রিম হৃদযন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করছে তা নিশ্চিত করা যায়।

প্রক্রিয়ার আগে, চলাকালীন এবং পরে আপনি কী আশা করতে পারেন?

• প্রক্রিয়ার আগে: ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা এবং ইমেজিং। হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের প্রতিটি ধাপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।
• প্রক্রিয়ার সময়: সার্জারিতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে এবং এতে দক্ষ কার্ডিওথোরাসিক সার্জনদের প্রয়োজন হয়।
• প্রক্রিয়ার পরে: নিবিড় পর্যবেক্ষণ, জীবনযাপনে পরিবর্তন এবং পুনর্বাসন প্রয়োজন। অনেক রোগী যান্ত্রিক হৃদযন্ত্র নিয়ে পূর্ণ ও অর্থবহ জীবন যাপন করেন।

ঝুঁকি এবং সম্ভাব্য জটিলতা

যেকোনো হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন বা হৃদযন্ত্র সংযোজন সার্জারির মতো, এখানে কিছু ঝুঁকি থাকতে পারে:

• সংক্রমণ: সার্জারির স্থানে সংক্রমণের ঝুঁকি।
• রক্ত জমাট বাঁধা: যা স্ট্রোক বা অন্যান্য জটিলতার কারণ হতে পারে।
• যান্ত্রিক সমস্যা: কৃত্রিম পাম্পে খুব কম ক্ষেত্রে ত্রুটি বা বিকল হওয়ার ঝুঁকি।
• প্রত্যাখ্যান: যদিও প্রকৃত হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের তুলনায় কম, তবুও কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে।

ফলাফল/উপকারিতা

ভারতে হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের সাফল্যের হার বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চগুলোর মধ্যে রয়েছে, যা রোবটিক হৃদযন্ত্র এবং যান্ত্রিক হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের উন্নতির কারণে সম্ভব হয়েছে। কৃত্রিম হৃদযন্ত্র থাকা রোগীরা সক্রিয় জীবনযাপন করতে পারেন, এবং অনেকে এই প্রক্রিয়ার পর বহু বছর ধরে বেঁচে থাকেন। টোটাল আর্টিফিশিয়াল হার্ট ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বেঁচে থাকার হার বৃদ্ধি করেছে।